সর্বপ্রথম, ওটার নাম Russell’s Viper বা রাসেল'স ভাইপার, যাঁর অনুবাদ রুপ হলো: রাসেলের ভাইপার।
এদের এমন নাম করণের কারণ হলো, স্যার প্যাট্রিক রাসেল ১৭ শতকে ভারতীয় সাবকন্টিনেন্টের অনেক সাপের সর্বপ্রথম পরিচিতি এবং বিশ্লেষণ করেছিল রাসেল'স ভাইপার সহ। তাই ১৮ শতকে সাপের ক্লাসিফিকেশনের সময় বিজ্ঞানীরা উনার নাম জুড়ে দেয় সাপগুলোর সাথে।
🐍 সে যাইহোক, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাসেল'স ভাইপার বিশ্বের ৫ম বিষধর সাপ নয়, এমনকি এটি সেরা ৩০ নাম্বারের মধ্যেও নেই। বরং এটির অবস্থান আমাদের দেশের গোখরো বা ক্রেইটের-ও পরে, এবং এর কামড়ে সুস্থ হওয়া মানুষ অহরহ আছে। আবার মোটেও এটির কামড়ে বাঁচার সম্ভাবনা ২০% বা এতো কম নয়, বরং রেকর্ড অনুযায়ী এই স্ট্যাটিস্টিক্সটি উল্টো।
🐍 শুধু হাসপাতালে দেরীতে যাওয়া, ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী না চলা বা কনসাল্টের মধ্যে না থাকার কারণেই রুগী মারা পড়ে পরবর্তীতে।
তারপরেও রাসেল'স ভাইপারের কামড়ে সুস্থতার হার ৭০% এর মতো প্রায়, যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নেয় তবে সুস্থতার হার ৯০% এর চেয়ে বেশি তথ্যানুসারে।
🐍 এরা বাচ্চা গড়ে ৩৫টি করে দেয়, তাও-ও প্রাকৃতিক বা ইকোসিস্টেমের কারণে অর্ধেক বাচ্চা এমনিতেই মা-রা পড়ে, যেমন: চিল, পেঁচা, শিয়াল, বনবিড়াল, বানর, গুইসাপ, বেজি ইত্যাদি সহ আরে বেশ কিছু প্রাকৃতিক কারণ।
🐍 প্রায় সব বিষধর সাপের ভেনমের মধ্যেই অন্যান্য ভেনমের উপস্থিতি থাকে, মূলত সাপেদের ভেনম হলো অনেকগুলো বিষের ককটেল বা মিশ্রণ। অন্যান্য বিষ শিকারকে দূর্বল করা বা হজমে সহায়তার জন্য; তবে সেইগুলো লিথাল বা মানুষ মারার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।
🐍 আবার এরা রাগের দিক থেকেও পিছিয়ে অনেক, বিশ্বের সবচেয়ে রাগী সাপ ব্ল্যাক মাম্বা, পাফ-এডার ইত্যাদি থেকে তো পিছিয়ে-ই এমনকি গোখরা থেকেও পিছিয়ে।
🐍 কোনো সাপ-ই তেড়ে এসে কামড়ায় না,বরং সাপেরা মানুষদের এড়িয়ে চলা পছন্দ করে।
যদি আপনি ওদের কোণঠাসা না করেন বা খুব কাছে গিয়ে বা এমন কিছু করে ওদের থ্রেট ফিল না করান, তবে কখনোই আপনাকে কামড়াতে উদ্ধত হবে না। এক্ষেত্রে অনেক সময় ওরা আপনার দিকে আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে হিস সাউন্ড অথবা বাইট ছুরবে ভয় দেখাতে, যেটা দেখে অনেকেই ভেবে বসে যে তাড়া করছে।
🐍 তাছাড়া রাসেল'স ভাইপারের বাইটের প্রায় অধিকাংশ রেকর্ড-ই হলো ওদের ওপর পা অথবা হাত দেয়া, নয়তো অজগর ভেবে ধরতে যাওয়া।
এছাড়া রাসেল'স ভাইপার এতোটাই অলস প্রকৃতির যে মানুষ দেখে তেড়ে আসা অথবা পালানো, কোনোটিই-ই এদের সাথে যায় না। এমনকি বাধ্য না হলে এরা নিজের জায়গা থেকে নড়ে-ই না, একই জায়গাতেই ৩-৪ দিন'ও পড়ে থাকে।
🐍 স্রষ্টা আমাদের প্রকৃতির সব কিছুই প্রকৃতি তথা আমাদের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন। এঁরা আমাদের ইকোলজি যেমন ব্যালেন্স করে, তেমন আমাদের বিভিন্ন রক্তবাহিত জটিল এবং কঠিন রোগের ঔষধ-ও প্রদান করে। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণকারী Captopril- জাতীয় ঔষধ, এমনকি ব্যাথানাশক বা পেইন কিলারের মতো মেডিসিন তৈরীতেও সাপের ভেনম ব্যবহার হয়।
🐍 সাপের এন্টিভেনম দু’প্রকারের: একটি মনোভ্যালেন্ট বা নির্দিষ্ট সাপের, আর অন্যটি পলিভ্যালেন্ট বা সব বিষধর সাপের জন্য কার্যকরী একটি ককটেল বা এন্টিভেনমের মিশ্রণ। সুতরাং, রাসেল'স ভাইপার সহ সব বিষধর সাপের এন্টিভেনম-ই আছে দেশে।
💥 সর্বোপরি সাপ'সহ সকল প্রাণীরা আমাদের ইকোলজি বা প্রকৃতির অংশ। একমাত্র সঠিক তথ্য এবং ধারণা-ই আমাদের সুরক্ষিত রাখতে পারে।
💥💥সব শেষ কথা: সাপে কাটলে ওঝা নয়, হাসপাতালে চিকিৎসা হয়।
তথ্যটি সংগৃহীত।
সম্পাদক ও প্রকাশক : এইচ এম জুয়েল